মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আসসালামুয়ালাইকুম। মোবাইল আমাদের অনেকের কাছেই একটি শখের ডিভাইস।মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার শেষ সকল বিষয়গুলো নিয়ে আজকে আলোচনা করব।  অনেকেই মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার  তা না জানা থাকার কারণে মোবাইল কিনে লস করে।  অর্থাৎ তাদের পছন্দসই মোবাইল ফোন কিনতে পারে না। এজন্য অবশ্যই কোন নতুন মোবাইল বা পুরাতন মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে আপনাকে যেই যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে সে সকল বিষয় নিয়ে আমরা আজ হাজির হয়েছে।  চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার। 

মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার

খুঁটিনাটি অনেকগুলো বিষয় আমাদেরকে যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা করে দেখতে হয় মোবাইল বাছাই করার ক্ষেত্রে। মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে নিচে ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো।  তো বিষয়গুলো থেকে  ধারণা নিয়ে আপনিও আপনার পছন্দের ফোনটি কিনতে পারবেন জেনে বুঝে।  চলুন দেখে নেওয়া যাক কি সেই বিষয়গুলো…

১। ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি

 মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার তার মধ্যে অন্যতম ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি। বাঙ্গালীদের মধ্যে একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায় যে,  মোবাইলের রিয়েল পার্ট ডিজাইন দেখে অনেকেই মোবাইল কিনে ফেলেন।  এটি কখনো করা উচিত নয়।  কারণ  শুধু  মোবাইলের ডিজাইন দেখে যদি আপনি মোবাইল কিনেন,  পরবর্তীতে কম দামি মোবাইল ব্যাক কভার কিনে ব্যবহার করতে হবে।  তাই প্রয়োজন হবে ডিজাইন এবং বিল কোয়ালিটি ভালোভাবে দেখে নেওয়া। 

কি কি থাকতে হবে ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটিতে

  • মোবাইলের দাম ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে মোবাইলের ফ্রেম অ্যালুমিনিয়াম কিংবা Stainless Steel রয়েছে কি না।
  • মোবাইলের ফোন পার্ট এবং ব্যাকপাটে কোন ধরনের প্রটেকশন ব্যবহার করা হয়েছে।
  • ২০ হাজার টাকা দামের মোবাইলে Corning Gorilla Glass 3 হলে ভালো হয়। 
  • ৩০ হাজার টাকা দামের মোবাইলে Corning Gorilla Glass 5 আশা করা যায়। 

 

২। ডিসপ্লে

আমাদের দেশে বেশিরভাগ মোবাইলে এমোলেড, সুপার এমোলেড বা আইপিএস ডিসপ্লে দেওয়া হয়ে থাকে। আপনাদের জন্য সাজেশন থাকবে এমোলেড কিংবা সুপার এমোলেড ডিসপ্লের ফোন নেওয়ার জন্য।বিশ হাজার টাকা দামের উপরে মোবাইল ফোন কিনলে অবশ্যই এমোলেড ডিসপ্লে সহ মোবাইল ফোন কেনার চেষ্টা করবেন।  মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার তার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ডিসপ্লে। 

আমোলেড ডিসপ্লের সুবিধা

  • এমোলেড বা সুপার এমোলেড ডিসপ্লেতে কালার খুবই একুরেট এবং স্যাচুরেটেড দেখা যায়। 
  • ছবি বা ভিডিও দেখতে খুবই সুন্দর লাগে।
  • এমোলেড ডিসপ্লে তে ব্যাটারি সাশ্রয় হয়।
  • ২০ হাজার টাকা দামের উপরে মোবাইল গুলোতে এমোলেড বা সুপার এমোলেড ডিসপ্লে দেওয়া হয়। 

আইপিএস ডিসপ্লের সুবিধা-অসুবিধা

  • আইপিএস ডিসপ্লে তে ছবি কিংবা ভিডিও ন্যাচারাল দেখা যায়।
  • কালার ন্যাচারাল আসলেও প্রচুর ব্যাটারি শক্তির প্রয়োজন হয়।

৩। চিপসেট – Chipset

একটি চিপসেট – Chipset কে মোবাইল ফোনের প্রাণ বলা হয়। মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার তার মধ্যে অন্যতম একটি চিপসেট – Chipset। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মোবাইল ফোনে চিটসেট হিসেবে Qualcomm Snapdragon ও Mediatek চিপসেট  ব্যবহার করা হয়। সকল বাজেটের মোবাইল ফোনগুলোতে এ ধরনের দেখা যায়।  তবে মিডিয়াম বাজেটের স্মার্ট ফোন কিনলে আমার পরামর্শ থাকবে Qualcomm Snapdragon চিপসেট দেওয়া  মোবাইল ফোন কেনার। Samsung কোম্পানির যেই Sumsung Exynos চিপসেট গুলো রয়েছে এগুলো অনেক পরিমাণে ব্যাটারি খেয়ে থাকে। এছাড়াও মোবাইল দ্রুত গরম হয়ে যাওয়া সহ মোবাইল হ্যাং হয়ে যাওয়া বা ফ্রেন্ড ড্রপ লক্ষ্য করা যায়। এই চিপসেট থাকলে গেমিং আপনারা খুবই করতে পারবেন না। Samsung কোম্পানির মোবাইল যদি আপনার একান্তই কেনার প্রয়োজন হয় তবে খেয়াল রাখবেন Qualcomm Snapdragon চিপসেট দেয়া মোবাইল ফোন কেনার।

মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার

Qualcomm Snapdragon এর সুবিধা

  • দীর্ঘ সময় ভালো পারফরম্যান্স
  • মোবাইল কম গরম হওয়া
  • হ্যাং হয়ে যাওয়া বা ফ্রেম ড্রপ কম হওয়া 

Mediatek এর সুবিধা

  • পাওয়ারফুল চিপসেট – Chipset
  • তুলনামূলকভাবে কম মূল্য
  • ভারী গেম খেলা সম্ভব

চিপসেট Nanometers (nm)

মোবাইলের চিপসেট বাছাই করার সময় আরেকটি বিষয়ে লক্ষ্য করবেন এটা কত ন্যানোমিটার ফেব্রিকেশনে তৈরি। বিভিন্ন মোবাইলের সেট গুলোতে দেখবেন 12 (nm), 6 (nm) বা 4 (nm) দেওয়া রয়েছে। চিপসেট – Chipset এর ন্যানোমিটার যত কম হবে ব্যাটারি সাশ্রয় তত বেশি হবে।  এজন্য আইফোনের ব্যাটারি কম হওয়া সত্বেও তুলনামূলক ব্যাটারি ব্যাকআপ অনেক বেশি যায়।  এজন্য চর্চা করবেন মোবাইল কেনার সময় কম  ন্যানোমিটার চিটসেট দেওয়া মোবাইল কেনার জন্য। 

৪। ক্যামেরা – Camera 

 মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার তার মধ্যে অন্যতম ক্যামেরা – Camera। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা দেখা যায় যে ক্যামেরা মেগাপিক্সেল যত বেশি সেই ক্যামেরা তত বেশি ভালো। বস্তুতপক্ষে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। পৃথিবীতে সব চাইতে ভালো ছবি তুলে থাকে iphone এর ক্যামেরা। Iphone এর ক্যামেরাগুলো এতদিন পর্যন্ত ভালো মেগাপিক্সেল ছিল। বর্তমান iphone 15  সিরিজের ১২ মেগাপিক্সেল থেকে ৪৮  মেগাপিক্সেল করা হয়েছে। এখন অনেক স্মার্ট ফোনে দেখতে পারবেন ক্যামেরার মেগাপিক্সেল ২০০ পর্যন্ত চলে গিয়েছে। ২০০ মেগাপিক্সেল দেওয়ার পরেও কিন্তু তারা আইফোনের মত ছবি তুলতে পারছে না। মূলত এটি ক্যামেরা কতটা ভালো সেটি নির্ভর করে ক্যামেরার সেন্সরের সাইজের উপর। ক্যামেরা সেন্সরের সাইজ এবং ইউআই অপটিমাইজেশন এর উপর পুরোপুরি নির্ভর করে থাকে ছবির কোয়ালিটি। 

যেহেতু ক্যামেরার মেগাপিক্সেল ভালো ক্যামেরার নিশ্চয়তা দেয় না সে ক্ষেত্রে কিভাবে বুঝবেন কোন ক্যামেরা ভালো ছবি এবং ভিডিও দিতে পারবে?  এজন্য মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার সেটা হচ্ছে, আপনার পছন্দের মোবাইলের রিভিউ দেখতে হবে।  ভিডিও রিভিউতে এ বিষয়গুলো ভালোভাবে উল্লেখ করা থাকে। 

৫। ব্যাটারি এবং চার্জার

মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে ব্যাটারি এবং চার্জার। ব্যাটারি হিসেবে পরামর্শ থাকবে যদি কোন মোবাইলের ব্যাটারি ৫০০০ এম্পিয়ার এর হয়ে থাকে তাহলে এটি আপনি আপনার পছন্দের লিস্টে রাখতে পারেন। চার্জিং সিস্টেম নির্ভর করে থাকি আপনার মোবাইল কেনার বাজেটের উপর। যেমন ১৫ হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোনে যদি ১৮ ওয়াটের চার্জার প্রোভাইড করা হয় তাহলে এটি যথেষ্ট। অন্যদিকে ২০ হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোনে যদি ৩০ ওয়াটের চার্জার প্রোভাইড করা হয় এটিও  নিতে পারেন। আবার ২৫ হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোনে যদি ৩৩ ওয়াট এর চার্জার পেয়ে যান এটিও হতে পারে সেরা  চার্জিং সিস্টেম। 

আপনি যদি এর বেশি দামি মোবাইল ফোনের দিকে লক্ষ্য করেন তাহলে চার্জিং ওয়াট আরো বেশি পেয়ে যাবেন। আপনার মোবাইলের বাজেট অনুযায়ী এটি মিলিয়ে নিতে পারেন।  তবে অনেক ফ্লাকসিপ মোবাইল ফোন আছে যেগুলোতে বেশি ওয়াটের চার্জার দেয়া হয় না।  কারণ ফাস্ট চার্জিং সব সময় ফোনের জন্য ভালো হয় না। 

৬। RAM-র‍্যাম এবং ROM-রোম

উপরের অংশগুলোতে মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার তার বেসিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি।  এবার হচ্ছে RAM-র‍্যাম এবং ROM-রোম অর্থাৎ স্টোরেজ নিয়ে আলোচনা করব। বর্তমান সময়ে আপনি  যদি  4gb ram এবং 32gb রম এর নিচের  মোবাইল ফোন কিনেন তাহলে ভালো মতো ব্যবহার করতে পারবেন না। বারবার হ্যাং হয়ে যাওয়া, স্লো কাজ করা ইত্যাদি দেখতে পারবেন। তাই চেষ্টা করবেন সর্বনিম্ন 4gb 64gb কিংবা 4gb 32 জিবি ভেরিয়েন্ট এর ফোন নেওয়ার জন্য। আপনার বাজেট একটু বেশি থাকলে ৮ জিবি র‍্যাম এবং ৬৪ কিংবা ১২৮ জিবি ভেরিয়েন্ট নিতে পারেন। 

পরিশেষে

 আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ছিল মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার। আমাদের আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি।  আমরা সবাই মোবাইল কিনে থাকি, কেউ প্রয়োজন মেটাতে কিনে কেউবা শখের মেটাতে। কেমন হবে যদি আপনার পছন্দের ফোনটি কেনার আগেই সেটি ভালো না মন্দ সেগুলো আপনি জানতে পারবেন।  এই পোস্ট থেকে আপনি ধারণা পাবেন মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার।  ফলে খুব সহজেই আপনি আপনার প্রয়োজনমতো বা আপনার বন্ধু প্রয়োজনমতো তার পছন্দের এবং তার বাজেটের মধ্যে কোন কোনটি ভালো হবে তা নির্বাচন করে দিতে পারবেন।  এরকম ইউজফুল তথ্য পেতে আমাদের সাইটটি বেশি বেশি ভিজিট করুন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *