অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আজকের পোস্ট। একটা সময় ছিল যখন ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য আপনাকে বিআরটিএ অথবা বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করতে হতো। কিন্তু এখন আপনি চাইলে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনটি ব্যবহার করে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব কিভাবে অনলাইনের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হয়।
অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন করার নিয়ম
অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো: মোবাইল কিংবা কম্পিউটার থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের ওয়েবসাইটে গিয়ে সেখানে BSP portal আপনি একটি একাউন্ট তৈরি করতে হবে এবং এখানে আপনাকে লানার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। যখন আপনি লানার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন তখন আপনাকে একটি Exam Date দিবে সেই exam Date আপনার কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। আগে আবেদন করার পরে প্রত্যেকটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা করে বিআরটিএ যেতে হতো।
আরোও পড়ুন: আপনার সিম কার নামে রেজিস্ট্রেশ করা কিভাবে দেখবেন।
তাছাড়াও স্মার্ট কার্ডের আবেদন করার পরে বিভিন্ন কাজের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে যেতে হতো। কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল যুগে একদিনের ভিতর আপনার পুরো কাজটি সম্পন্ন হয়ে যাবে। আপনি যখন লানার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন তখন তারা আপনাকে একটি exam Date দিবে। সেই exam Date আপনার exam নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার পরে আপনার লানার লাইসেন্স নিয়ে গেটে প্রবেশ করে তাদেরকে লানার লাইসেন্সটি দেখালে তারা আপনাকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিবে। এখন প্রথমে আপনাকে ‘বায়োমেট্রিক এনডোর্সমেন্ট’ করতে হবে।
তারপরে আপনাকে রিটেন পরীক্ষা অংশগ্রহণ করতে হবে এবং ওই দিনেই তারা রিটেন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে দিবে। তারপর রিটেন পরীক্ষার পরে আপনাকে ভাইবাতে অংশগ্রহণ করতে হবে। এখানে ভাইবাতে আপনাকে প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। ভাইবা পরীক্ষা খুবই কঠিন নয় সেখানে খুবই সহজ সহজ প্রশ্ন আসে। যেমন:
- যে সাংস্কৃতিক চিহ্ন গুলো বাংলাদেশের ট্রাফিক সিগনালের জন্য ব্যবহার করা হয়। এই সাংস্কৃতিক চিহ্ন গুলো আপনাকে জিজ্ঞেস করবে।
তাদের প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে প্রদান করলে আপনি ভাইবাতে উত্তীর্ণ হবেন। যখন আপনি ভাইবাতে উত্তীর্ণ হবেন তখন আপনাকে প্রাক্টিক্যাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সময় আপনার লানার লাইসেন্সটি তাদের কাছে জমা দিতে হবে এবং সেই লানার লাইসেন্সের পিছনেই আপনি প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় পাস করেছেন কিনা সেটি লিখে দিবে বিআরটিএ থেকে।
যদি আপনি প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তাহলে আপনি যে লানার লাইসেন্সের জমা দিবেন সেই লানার লাইসেন্সটি ওই দিন বিকাল ৫ টায় অথবা আগে পরে লিখে দিবে আপনি প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় পাস করেছেন।
এখন আপনি লানার লাইসেন্স নিয়ে আপনার বাসায়। আপনার বিআরটিএ কাজ শেষ। এখন আপনাকে বাসায় এসে রাত ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপরে রাত ৮ টার পরে যে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে সেই ড্রাইভিং লাইসেন্সের একাউন্টে লগইন করুন।
তাহলে আপনি দেখতে পাবেন ‘প্রিন্ট লানার’ অপশনের নিচে ‘কৃতকার্য’ লেখা চলে আসবে। (এখানে কিছুটা সময় আগে পিছে হতে পারে)। যখন আপনার রেজাল্টটি এখানেই আপলোড হয়ে যাবে তখনি ‘পরবর্তী’ অপশনে ক্লিক করুন। এখানে আপনাকে কিছু ডকুমেন্ট আপলোড করতে হবে। যেমন:
- আপনি যে লানার লাইসেন্সটি পরীক্ষা দিয়েছেন এবং যে লানার লাইসেন্সের পেছনে তারা কলম দিয়ে পাস লিখে দিছে। সেই লানার লাইসেন্সটি আপনাকে এপিঠ ওপিট করে স্ক্যান করতে হবে। এবং স্ক্যান করা লানার লাইসেন্সটা আপলোড করতে হবে।
- সেই সাথে আপনি লানার করার সময় যে ডকুমেন্টগুলো প্রদান করেছেন। স্কুল সার্টিফিকেট/মেডিকেল সার্টিফিকেট সেই ডকুমেন্টগুলো আপনাকে এখানে আপলোড করতে হবে।
এখানে আপনাকে সকল ডকুমেন্ট আপলোড করতে হবে। তা না হলে, আপনার আবেদনটি বাতিল হয়ে যাবে। এখানে সকল ডকুমেন্ট সঠিকভাবে আপলোড করার পরে ‘Next’ অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনার সামনে একটি পেইজ ওপেন হবে। সেখানে দেখতে পাবেন আপনার এই ড্রাইভিং লাইসেন্সটি আপনি ডাকযোগ মাধ্যমে নিবেন কি না।
এখন আপনি যদি ডাকযোগের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে চান তাহলে এখানে আপনার ঠিকানা দিতে হবে। যেমন:
- ঠিকানার ধরন (ইংরেজিতে)
- মোবাইল নম্বর (ইংরেজিতে)
- গ্রাম/বাড়ি(ইংরেজিতে)
- রোড/ব্লক/সেন্টার (ইংরেজিতে)
- বিভাগ (ইংরেজিতে)
- জেলা (ইংরেজিতে)
- থানা (ইংরেজিতে)
- পোস্ট কোড (ইংরেজিতে)
এখন উপরে উল্লেখিত অপশন গুলোতে আপনি আপনার সঠিক ঠিকানা বসিয়ে দিন। তারপরে ‘Next’ অপশনে ক্লিক করুন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পেমেন্ট ফি পরিশোধ করার নিয়ম
এখন আপনাকে পেমেন্ট করতে হবে। পেমেন্ট করার জন্য বিভিন্ন গেটওয়ে দেখতে পাবেন। সেখান থেকে আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী গেটওয়ে সিলেক্ট করে পেমেন্ট করুন (পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখুন। যেমন: আপনি রাত ১০টার পরে আর পেমেন্ট করতে পারবেন না। রাত ১০টার পরে পেমেন্ট অফ হয়ে যায়। সেজন্য চেষ্টা করবেন রাত ১০টার আগে পেমেন্ট করতে)।
আপনি লানার লাইসেন্স করেছেন, এক্সাম দিয়েছেন,স্মার্ট কার্ডের আবেদন করেছেন, পেমেন্ট করেছেন এবং আপনার এড্রেস/ঠিকানা দিয়েছেন। তাহলে আপনার কাজ শেষ। এখন আপনার দেওয়া ডকুমেন্টগুলো বিআরটিএ থেকে চেক করবে। তারা দেখবে আপনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন কিনা এবং কি কি ডকুমেন্ট সাবমিট করেছেন।
এখানে আপনার সকল ডকুমেন্টগুলো সঠিকভাবে থাকলে তারা ২ দিনের মধ্যে আপনার ই-লাইসেন্স/টেম্পোরারি লাইসেন্স পাঠিয়ে দিবে। এই লাইসেন্সটি প্রিন্ট করে আপনি গাড়ি চালাতে পারবেন। যতদিন না আপনার কার্ড চলে আসে আপনার কাছে। এতে করে কোন সমস্যা হবে না।
ই-লাইসেন্স পেয়ে গেলে এই লাইসেন্সের তথ্য দিয়ে আপনি DL checker অ্যাপের ভিতরে গিয়ে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ইনফরমেশন/তথ্যগুলো দেখতে পারবেন। এখানে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। ই-লাইসেন্স আসার পরে কিন্তু ‘নো ডাটা ফাউন’ লেখা আসতে পারে। এখানে যদি ‘নো ডাটা ফাউন্ড’ লেখা আসে তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই।
৫ থেকে ১০ দিন অপেক্ষা করলে দেখতে পাবেন সেখানে আপনার সকল তথ্য চলে আসবে। এখন সকল কিছু ঠিক থাকলে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি ২০ থেকে ৩০ কর্ম দিবসে ডাকযোগের মাধ্যমে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি পেয়ে যাবেন।
আশা করি, আর্টিকেলটি পড়েই আপনি বুঝতে পেরেছেন কিভাবে অনলাইনের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করবেন। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে। আজকের মত এখানে বিদায় নিচ্ছি দেখা হচ্ছে পরবর্তী অন্য কোন আর্টিকেলে। ধন্যবাদ!