বর্তমানে বাংলাদেশে চাকরি পাওয়াটা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সেজন্য মানুষ চাকরির অভাব থাকায় কর্মসংস্থানের জন্য অনেকেই তাদের বাড়ির সামনে অথবা কোন বাজার বা কোন জনবহুল এলাকায় একটা মুদি দোকান ভাড়া অথবা তৈরি করে এবং সেখানে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তোলে। কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সম্পর্কে ধারণা না থাকলে দোকানটাকে পরিপূর্ণভাবে সাজানো যাবে না এবং ক্রেতাদের ও আকৃষ্ট করতে পারবে না।
সুতরাং ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে না পারলে দোকানের কেনা বেচা ও ভালো হবে না অতঃপর সেই দোকান থেকে আয় ও কম হবে। তাই আপনারা যদি একটা মুদি দোকান দেওয়ার কথা ভাবেন তাহলে প্রথমে আপনাকে নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এই নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সম্পর্কে ধারণা না থাকলে মুদি দোকান দিয়ে সফল হতে পারবেন না কেননা যে দোকানে যত বেশি পণ্য থাকবে তত বেশি ক্রেতার সমাগম হবে এবং তত বেশি কেনা-বেচা হবে। আসুন দেখে নেয়া যাক নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সমূহ।
নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সমূহ গুলোর মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয় এবং ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার মতো বিভিন্ন ধরনের পণ্যের তালিকা দেয়া হলো।
রান্নাবান্নার পণ্য সামগ্রী
ডাল, চাল, তেল, লবণ, নুডুলস, আচার,সেমাই, আলু, চিনি, মসলা, সুজে, তাল, মিস্ত্রি , ইত্যাদি রান্নাবান্নার এই পণ্য সামগ্রী নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা গুলোর মধ্যে চাইতে কমন ও জনপ্রিয়।
পানীয় পণ্য সামগ্রী
বিভিন্ন ধরনের কোল্ড ড্রিংক, মিনারেল ওয়াটার, আইসক্রিম, চা, কফি, তরল দুধ ইত্যাদি এছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সমূহের মধ্য এই পণ্যগুলো কমন এবং গুরুত্বপূর্ণ।
বেকারি পণ্য সামগ্রী সমূহ
কেক, বিস্কুট, জেলি, পাউরুটি, কুকিজ, মধু, চকলেট, আচার, জুস, ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সমূহের মধ্যে আরো বিভিন্ন ধরনের আইটেম রয়েছে।
শারীরিক ব্যবহার্য পণ্য সামগ্রী
শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, ব্রাশ, লোশন, স্যানিটারি, সরিষার তেল, নারিকেল তেল, খাবার স্যালাইন, টিস্যু, হ্যান্ডওয়াশ, ফেসওয়াশ, শীতের ক্রিম, ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সমূহের মধ্যে এই পণ্যগুলো মানুষ শারীরিকভাবে ব্যবহার করে থাকে।
উৎপাদিত কিছু মুদি আইটেমের তালিকা সমূহ
চাল, তেল, ডাল, সেমাই, ময়দা, পেঁয়াজ, লবণ, সুজি, চিড়া, আদা, হলুদ, রসুন, মরিচ, জিরা, এলাচি, দারচিনি, কালোজিরা, গুড়, মুড়ি, চিনি, লবণ, ডিম, দুধ ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সমূহের মধ্যে এই পণ্যগুলো উৎপাদিত পণ্য হিসেবে পরিচিত।
আনুষঙ্গিক ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী
কাগজ খাতা, কলম, ব্যাটারি, রাবার, মার্কার, পেন্সিল, কালার পেন, চুড়ি, কানের দুল, বাচ্চাদের খেলনা, মালা, সুঁই, বোতাম, ব্লেড, ব্যাটারি, আলতা ইত্যাদি এই পণ্যগুলো নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা হিসাবে পরিচিত এবং জনপ্রিয়।
অন্যান্য পণ্য সামগ্রী
মুদি দোকানে উপরে উল্লিখিত নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সামগ্রী ছাড়াও আপনি বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র রাখতে পারেন। আপনি যত ধরনের পণ্য সামগ্রীর দোকানে তুলবেন তত বেশি ক্রয় বিক্রয় হবে এবং ক্রেতারা আপনার দোকানে প্রতি আকৃষ্ট হবে। কারণ একজন ব্যক্তি যদি তার সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বা পণ্য সামগ্রী একটি দোকান থেকে পায়। তাহলে সে যেই জিনিস প্রয়োজন সেই জিনিসপত্র ক্রয় করার জন্য ওই দোকানে যাবে। অতএব চাল, ডাল, লবণ, তেল, এইসব কমন কিছু সামগ্রী ছাড়াও আপনি বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী তুলতে পারেন। যেমন গ্যাসের সিলিন্ডার, হাঁস মুরগির খাবার এছাড়াও আপনি পাশাপাশি মোবাইল রিচার্জ এর কাজও করতে পারেন। এভাবে আপনি মুদি দোকানের নির্দিষ্ট কিছু পণ্য ছাড়াও আপনার পরিকল্পনা মাফিক বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তুলতে পারেন।
সুতরাং গ্যাসের সিলিন্ডার, হাঁস মুরগির খাবার, মোবাইল রিচার্জ এগুলো আপনার নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সমূহের মধ্যে একটা আনকমন এবং আকর্ষণীয় বিষয়। আপনি যদি মোবাইল রিচার্জ এর ব্যবস্থা করেন আপনার দোকানে, তখন মানুষ মোবাইল রিচার্জ এর জন্য নির্দিষ্ট করার দরকার না যে আপনার কাছে যাবে মোবাইল রিচার্জ করতে। পাশাপাশি যদি হাঁস মুরগির খাবার রাখেন তাহলে মানুষ আপনার খাবার ক্রয় করার জন্য আপনার দোকানে যাবে। আকর্ষণীয় আরেকটা বিষয় হচ্ছে গ্যাসের সিলিন্ডার, এই গ্যাসের সিলিন্ডার কিন্তু সকল দোকানে রাখেনা আপনি যদি গ্যাসের সিলিন্ডার রাখেন তাহলে অনেক ক্রেতা গ্যাস ক্রয় করার জন্য আপনার কাছে যাবে।
সতর্কতামূলক কিছু বিষয়
নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সমূহের পাশাপাশি কিছু সতর্কতা রয়েছে। আপনি যদি এই সতর্ক গুলো গ্রহণ করেন বা মেনে চলেন তাহলে আপনি মুদির দোকানের বিভিন্ন সমস্যা থেকে নিরাপদ থাকবেন পাশাপাশি আপনার ইনকামও বৃদ্ধি পাবে।
বাকি না দেওয়া। অনেক সময় দেখা যায় বাকি দেওয়ার কারণে অনেক মুদি দোকানদার দেউলিয়া হয়ে পড়ে বা ক্ষতির শিকার হয়। তবে বাকি দিলে অনেক সময় ক্রেতারা ও দোকানে আসে কিন্তু আপনি যদি বাকি দিতে চান তাহলে সেই ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন নির্দিষ্ট কিছুদিনের জন্য বাকি দিবেন। উল্লেখ করে দিবেন যে এই কয়দিনের ভিতরে বাকি পণ্যের টাকা দিতে হবে।
- আপনি দোকানের পণ্য বিক্রি বৃদ্ধি এবং ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য আপনি প্রতি মাসে একটা ডিসকাউন্ট দিতে পারেন।
- প্রতিদিন যে সকল পণ্যগুলো বিক্রি করেছেন তার একটা লিস্ট করে রাখবেন।
- প্রতিদিন পণ্য বিক্রির শেষে হিসাব করে রাখবেন কত টাকা ক্রয় বিক্রয় হলো।
- সবচাইতে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ক্রেতাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা। যাতে পরবর্তীতে ক্রেতারা আপনার দোকানে আসার জন্য আকৃষ্ট হয়। আর ভালো ব্যবহার হল একটা দোকান বা একটা ব্যবসায়ের মূল হাতিয়ার।
- ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে।
আপনি চাইলে নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সমূহ আপনার দোকানে ব্যানার করে বাইরে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে হবে। আপনি যদি বেশি দামে পণ্য বিক্রি করেন তাহলে ক্রেতারা পরবর্তীতে আপনার দোকানে আসবে না। আর ক্রেতা ধরে রাখার অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রি করা।
আপনি যদি নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সম্পর্কে জ্ঞান রাখার পাশাপাশি, এই সতর্কতা অবলম্বন করে মুদির দোকান পরিচালনা করেন তাহলে আপনি কখনোই ক্ষতির শিকার হবেন না বা দেউলিয়া হবেন না। ইনশাআল্লাহ
কত টাকা হলে মুদি দোকানের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন ?
বর্তমানে মুদি দোকানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে । অনেকে আছে চাকরি জীবন শেষ করে বাড়িতে এসে একটা মুদি দোকান দিয়ে বসে। একটা মুদি দোকান শুরু করার আগে নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার পরে আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে। যে আপনি কি কি পণ্য আপনার দোকানে তুলবেন। অতঃপর সেই পণ্যের দামের উপর নির্ধারণ করবে আপনার মুদি দোকান দিতে কত টাকা লাগবে। তবে আপনি চাইলে মোটামুটি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে একটা মুদি দোকান দিতে পারেন।
মুদি দোকানের ব্যবসা শুরু করবেন যেভাবে
অনেকে বলে থাকে যে আমি কীভাবে একটা দোকানের ব্যবসা শুরু করব। আপনি প্রথমে একটা জায়গা নির্ধারণ করবেন তারপরে সেই জায়গায় একটা দোকান দিবেন এবং সেখানে আপনার বাজেট অনুযায়ী কিছু পণ্য সামগ্রী তুলবেন। তবে তার আগে আপনাকে নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সম্পর্কে একটা ধারণা নিতে হবে। অতএব আপনি নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সম্পর্কে ধারণা নেয়ার পরে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দোকানে পণ্য তুলবেন । তারপর উপরে উল্লিখিত সতর্কতা গুলো অবলম্বন করে মুদি দোকানের ব্যবসা শুরু করুন।
আশা করি আপনি এখান থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা সমূহ এবং মুদি দোকানের ব্যবসা শুরু করার জন্য একটা পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন। শুধু ব্যবসা শুরু করলে হবে না সেই সাথে আপনাকে ক্রেতা ধরে রাখা এবং ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য কিছু সতর্কতা ও পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে এবং আপনার সততা বজায় রাখতে হবে। যে সতর্কতা গুলো অবলম্বন করবেন তা আমরা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।