ওয়াইফাই কি?
ওয়াইফাই (Wi-Fi) এর পূর্ণরুপ হচ্ছে Wireless Fidelity। ওয়াইফাই একটি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তি যা কম্পিউটার, মোবাইল ডিভাইস এবং অন্যান্য প্রযুক্তির সাথে ইন্টারনেট সংযোগের সুযোগ দেয়। এই প্রযুক্তিতে একে অপরের সাথে তথ্য সরবরাহ করার জন্য তারের পরিবর্তে একটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি সংকেত ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সুতরাং, সহজ ভাষায় ওয়াইফাই হলো একটি তারবিহীন প্রযুক্তি। Wi-Fi এর সাথে সংযুক্ত ডিভাইসে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস সরবরাহ করতে কাছের ডিভাইসগুলি থেকে সিগন্যালগুলি প্রেরণ ও গ্রহণ করতে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ রাখতে, ওয়াইফাই একটি সর্বব্যাপী সহজ এবং জনপ্রিয় মাধ্যম। আর দিন দিন এই প্রযুক্তি মানুষের কাছে অধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ওয়াই-ফাই আমাদের প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ অফিসে, হোটেলে, ক্যাফে, এয়ারপোর্টে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, মার্কেটে এবং অন্যন্য জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওয়াইফাই ব্যবহার করা হচ্ছে মানুষের যোগাযোগের সুবিধার জন্য। ওয়াইফাই একটি তারবিহীন যোগাযোগ মাধ্যম হওয়াই বেশিরভাগ মানুষই ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত কাজে এটি ব্যবহার করছে।
Wi-Fi এর সুবিধা সমূহ:
- ওয়াইফাই রাউটার দিয়ে আপনি নির্দিষ্ট এরিয়ার ভেতরে একাধিক ডিভাইসে একসাথে সংযোগ করতে পারেন।
- Wi-Fi এর স্পীড খুব দ্রুত হওয়ার কারনে এর দ্বারা ইন্টারনেট এক্সেস করা খুবই সহজ ও সুবিধাজনক আর সে জন্যই এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে জনসাধারণের নিকট।
- আপনি ওয়াইফাই এর সাহায্যে যে কোনও স্থান থেকে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে পারেন(আপনার রাউটারের সিগনাল অনুযায়ী)।
- বর্তমানে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়াইফাই একটি জনপ্রিয় ইন্টারনেট সংযোগ হিসাবে পরিচিত। ওয়াইফাই ছাড়া ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলো যেন একেবারেই অচল।
- কাঠামোগত ক্যাবলিং ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই আপনি খুব সহজেই ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারবেন।
- ওয়াইফাই খুব দ্রুত এবং সহজ। ওয়াইফাই সিস্টেম এবং এর প্রোটোকলগুলির প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রয়োজন নেই।
- আপনি খুব সহজেই টিপি-লিংক, ডি-লিংক, টেন্ডা ইত্যাদি থেকে খুব সাশ্রয়ী মূল্যে ওয়াইফাই পেতে পারেন।
- বিভিন্ন ধরণের ডিভাইসে WIFI ব্যবহার করতে পারবেন যেমন: স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ডিভাইস এবং অন্যান্য পোর্টেবল ডিভাইস।
- ওয়াইফাই এর সাহায্যে ইন্টারনেট যে কোনও জায়গা থেকে অ্যাক্সেস করা যায়। যেমন: বাস, ট্রেন, কফি-শপ, সুপার মার্কেট ইত্যাদি। শুধুমাত্র ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ড জানা থাকলেই হলো।
- আপনি Wi-Fi এক্সটেন্ডার ব্যবহার করে নেটওয়ার্কটি প্রসারিত করতে পারেন।
Wi-Fi এর অসুবিধা সমূহ:
- ওয়াইফাই এর ডেটা ট্রান্সফার রেট কমে যায় যখন ব্যবহারকারী বা ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত কম্পিউটারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
- ওয়াইফাই রাউটারে আমাদের নেটওয়ার্কের পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত করতে বিভিন্ন এনক্রিপশন পদ্ধতি রয়েছে। পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত না থাকলে যে কোনো সময়ে আপনার ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- ওয়াইফাই অ্যাক্সেস প্রায় ৩০ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত (যেমন ১০০ থেকে ৩০০ ফুট) সীমাবদ্ধ।
- অনেক রাউটার সর্বাধিক ৩০ ডিভাইসকে সংযুক্ত করার অনুমতি দেয়। আপনি আরও ডিভাইস যুক্ত করার সাথে সাথে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের ব্যান্ডউইদথ দুর্বল হয়ে যায়।
- ওয়াইফাই এর কারণে মানুষের স্বাস্থ্য ক্ষতিও হতে পারে; যেমন: ক্যান্সার, অনিদ্রা, অ্যাপোপটোসিস এবং গর্ভবতী মহিলাদের ওয়াইফাই রেডিয়েশনের বাইরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- ওয়াইফাই পাসওয়ার্ডকে সঠিকভাবে সুরক্ষিত না করা হলে লোকেরা ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস করতে পারে এবং তথ্য চুরি করতে এবং এমনকি খারাপ উদ্দেশ্যে আপনার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারে।
Wi-Fi এর অনেক সুবিধা এবং অসুবিধা দুটিই রয়েছে। তবে এর অনেক সুবিধা থাকার কারনে, এই প্রযুক্তিটি বর্তমানে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সময়ের সাথে সাথে Wi-Fi এর ব্যবহার কারীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অদূর ভবিষ্যৎ এ Wi-Fi এর ব্যবহার আরো ব্যাপক হরে বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
ওয়াইফাই কি? এটি কিভাবে কাজ করে?
ওয়াইফাই কি? এর সুবিধা ও অসুবিধা সবই তো জানলাম। এবার আসুন জেনে নেই এটি কিভাবে কাজ করে।
- ওয়াইফাই ব্যবহার করতে সক্ষম ডিভাইসগুলি রেডিও তরঙ্গ প্রেরণ এবং গ্রহণের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে। অর্থাৎ ওয়াই-ফাই ফ্রিকোয়েন্সিগুলির মাধ্যমে আপনার ডিভাইস এবং রাউটারের মধ্যে তথ্য প্রেরণ করতে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। ডেটা প্রেরণের পরিমাণের উপর নির্ভর করে দুটি রেডিও-ওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা যেতে পারে: 2.4 গিগাহার্টজ এবং 5 গিগা হার্টজ। Wifi তে সাধারণত 802.11b স্ট্যান্ডারর্ডে ভালো ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়া যায়।
- দুটি প্রধান ধরণের ওয়্যারলেস সংযোগ রয়েছে যা আপনাকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করতে পারে। এগুলো হলো- আপনার মোবাইল নেটওয়ার্ক সরবরাহকারীর মাধ্যমে মোবাইল ইন্টারনেট অ্যাক্সেস । এবং ওয়াইফাই রাউটার নামক একটি ডিভাইসের মাধ্যমে একটি ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সংযোগ।
- ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক যেহেতু দ্বিমুখী ট্র্যাফিক হিসাবে কাজ করে সেহেতু ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত ডেটাগুলি রাউটারের মাধ্যমে একটি রেডিও সিগন্যাল কোড হয়ে পাস করে থাকে যা কম্পিউটারের বেতার অ্যাডাপ্টারের মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়।
বর্তমান যুগ ইন্টারনেট এর যুগ। এই যুগে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হচ্ছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। আর এই সংযোগের ক্ষেত্রে ওয়াইফাই হচ্ছে সবথেকে বেস্ট। তাই যতো দিন যাচ্ছে এর ব্যবহার ও ততো অধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। [ওয়াইফাই কি? এটি কিভাবে কাজ করে?]