শিক্ষা

লতিফ ভুঁইয়া কলেজের অধ্যক্ষের অনিয়ম ও দূর্নীতির শেষ নেইঃজড়িত রয়েছেন নিষিদ্ধ সংগঠনে

  নিজস্ব প্রতিবেদক ১৪ জানুয়ারী ২০২১ , ৫:০৩ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ

লতিফ ভুঁইয়া কলেজের অধ্যক্ষের অনিয়ম ও দূর্নীতির শেষ নেইঃজড়িত রয়েছেন নিষিদ্ধ সংগঠনে

সালে আহমেদ,ডেমরাঃ

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ৬৫ নং ওয়ার্ডের মাতুয়াইল এলাকার মাতুয়াইল হাজী অাঃলতিফ ভুইয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ অাবু নোমান মোঃ মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি- অনিয়ম ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীর সাথে জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ২০০১ সালে রমনা বটমূলে হামলার অাসামী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিল।সেই সময়ে তিনি মাতুয়াইলের একটি মসজিদের পেশ ইমাম এবং হিজবুত তাহরীতের ডেমরা থানার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অন্যন্য অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, অকারণে চাকরিচ্যুত করার হুমকি, শিক্ষার্থীদের নম্বরপত্র ও সনদ বিতরণে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ,অকৃর্তকায শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেয়ার সুযোগের নাম করে ২০-৩০ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত নেয়া,অবৈধ বিল ভাউচার তৈরি করে অর্থ নেয়া শিক্ষক নিয়োগে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া,যখন তখন অবকাঠামো নির্মানের নামে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করা,বোর্ডে যাওয়ার নাম করে অসময়ে অসময়ে ভুয়া বিল করা,সবসময়ই কলেজের ফান্ড শূন্য বলে শিক্ষকদের বেতন অাটকিয়ে দেয়া,অধ্যক্ষ থাকাকালীন একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা,ফরম ফিলাপের নামে জোরপূর্বক অর্থ অাদায়,এমনকি তার নিয়োগের ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, নামে বেনামে স্থাবর অস্থাবর সম্পদ কেনার ও অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান,
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কে জিম্মি করে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে গেলে চাকরিচ্যুত করার হুমকি ও দেয়া হয়। এছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের সাথে অশোভন অাচরন করতেন।শিক্ষকদের বেতন অাটকিয়ে তিনি মোটা অংকের টাকা প্রতিষ্ঠান থেকে নিতেন।তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সুযোগ সাহস পেতো না।স্বজন প্রীতির মাধ্যমে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নের নামে প্রতারণা করতেন।কলেজের কিছু শিক্ষক ও তার সাথে অাতাত করে এসব অনিয়ম ও দূর্নীতিতে জড়িয়ে পরেছে।তিনি এই প্রতিষ্ঠানে থেকে ও জামাতের রাজনীতি করতেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মচারী জানান,তিনি জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। বিভিন্ন সময়ে তিনিনদেশ বিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত থাকতেন।স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি হতে গর্ভনিং বর্ডির কাউকে তিনি পরোয়া করতেন না।অষ্টম ও নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন বাবদ অতিরিক্ত ফি আদায় এবং এই টাকা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা। কারণে-অকারণে নোটিশ ও চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন।নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা অতিষ্ঠ। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করেও তাঁরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।

এসব অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে কলেজের একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী প্রতিষ্ঠানের কমিটির বরাবর চিঠি দিয়েছেন।

গতকাল সরেজমিনে ও লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে।অর্নাস পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান টি চালু রয়েছে।এত দিন ভালোই চলছিল। ২০০৬ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে মোঃ মতিউর রহমান যোগদানের পর থেকেই নানা সমস্যার শুরু। তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি অধ্যক্ষ হয়েও প্রায়ই দেরিতে কলেজে উপস্থিত হন। অনেক সময় কলেজে উপস্থিত না হয়েও অন্য দিন হাজিরাখাতায় স্বাক্ষর করেন। সব সময় শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান দাবি করেন, এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নাই।তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।তিনি অারো ও বলেন,অামি কখনো অবৈধ ভাবে এক টাকা নেই নি।ছারছীনা দরবারে মুরিদ অামি। সবসময়ই নিজেকে খারাপ পথ হতে দূরে রাখার চেষ্টা করি।হিজবুত তাহরীর সাথে যুক্ত থাকার বিষয়ে কথা বললে তিনি এড়িয়ে যান।কলেজের নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কথা বললে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে।নামে বেনামে সম্পদ অাছে কিনা জানতে চাইলে বলেন,অামি কখনো অন্যায় কাজ করি নি। অামার নিজের কোনো সম্পদ নেই,ভাড়া বাসায় বসবাস করি।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রাকিব ভুইয়া বলেন, অভিযোগের বেশির ভাগই সত্য। এই বিষয়ে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে।কলেজের অধ্যক্ষ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন,তার বিরুদ্ধে এর অাগে শুনেছি রমনা বটমূলে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। যদি তিনি সম্পৃক্ত থাকেন তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় তিনি বলেন,কলেজের বিগত সময়ের শিক্ষকদের সকল বকেয়া অামি এসে পরিশোধ করেছি।কলেজের অনিয়ম গুলো যাতে না হয় সেদিকে জোর তাগিদ দিচ্ছি।কলেজের দূর্নীতির সাথে যেই জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াট হুশিয়ারী দেন তিনি।