আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ, আজ আমরা আলোচনা করব গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে ব্যাখ্যা সম্পর্কে। সমাজের মধ্যে অনেককেই দেখা যায় যারা গান-বাজনা শোনা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে পারে না। মহল্লার মধ্যে যেকোনো অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে থেকে শুরু করে অনেক হালাল অনুষ্ঠানগুলোতেও গান-বাজনা করা হয়। অথচ কি বলা হয়েছে গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে ব্যাখ্যা। গান বাজনার ব্যাপারে ইসলামের হুকুম ও কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক।
গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে ব্যাখ্যা
ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে গান-বাজনা করা এবং শোনা দুটোই হারাম ও কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। সেটি যে কোন গানই হোক না কেন তা হারাম। বর্তমানে গানের অনেক ধরনের নামকরন আমরা শুনতে পাই যেমনঃ নবীতত্ত্ব, জারি, পল্লীগীতি, মুর্শিদী, কাওয়ালী, ভাওয়ালি ও ভক্তিমূলক ইত্যাদি যেকোনো ধরনের গানই হোক না কেন। তবে বাদ্যযন্ত্র বা বাজনা ব্যতীত আল্লাহ তায়ালার গুণাবলী বিষয়ে হামদ, নাত, কাসিদা ও গজল ইত্যাদি পাঠ করা কিংবা শোনা আমাদের জন্য জায়েজ রয়েছে।
গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন এর আয়াত হচ্ছে-
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا
অর্থ হচ্ছে- “আর মানুষের মধ্যে থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ওইগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে।”
আরও পড়ুন: বিনা হিসাবে জান্নাতে যাওয়ার দোয়া
-[সূরা লোকমানঃ আয়াত- ৩১:৬]
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি ‘লাহওয়াল হাদিস’ অবলম্বন করে, সে দোযখের কঠিন শাস্তি প্রাপ্ত হবে, কাজেই সেটি হারাম। কিন্তু প্রশ্ন আসতে পারে ‘লাহওয়াল হাদিস’ কি? সূরা লোকমানঃ আয়াত- ৩১:৬ এ বর্ণিত ‘লাহওয়াল হাদিস’ এর ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাছীরঃ অষ্টম খন্ড, ৩/৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- ‘লাহওয়াল হাদিস’ এর অর্থ সংগীত বা গান বাজনা। বেশিরভাগ তাফসিরকারকগণ ‘লাহওয়াল হাদিস’ বলতে গান কে বুঝিয়েছেন।
গান বাজনা সম্পর্কে হাদিসের ব্যাখ্যা
গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রতি যারা আগ্রহী ওই সকল ব্যক্তির শাস্তি খুব অপমানজন। যেহেতু এসব কাজের ভালো-মন্দ স্বাদ চোখ ও কানের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা এমন শাস্তি নির্ধারণ করে রেখেছেন যা অত্যন্ত কষ্টদায়ক এবং বড় অপমানজনক। টিভি প্রদর্শন করা হারাম। অশ্লীল ক্যাসেট ও বই পুস্তক ক্রয় বিক্রয় করাও হারাম। অশ্লীল কবিতা উপন্যাস এবং বাতিল পন্থীদের পুস্তক পাঠ করাও হারাম। বর্তমানে অধিকাংশ যুবক-যুবতী অশ্লীল ক্যাসেট বই গান-বাজনা সহ উপন্যাস পেশাদার অপরাধীদের কাহিনী অথবা অশ্লীল কবিতা পাঠ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এসবের শাস্তি উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِيْنٌ-
অর্থ হচ্ছেঃ “একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে অন্তর ভাবে গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র গ্রহণ করে এবং তা নিয়ে হাসি ঠাট্টা বিদ্রুপ করে এদের জন্য রয়েছে অপমাননাকর শাস্তি” [সূরা: লুক্কমান – আয়াত: ৬]
عَنْ أَبِيْ مَالِكِ الأَشْعَرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ.
অর্থ হচ্ছেঃ “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অবশ্যই অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা যেনা, রেশম, নেশাদার দ্রব্য ও গান বাজনা বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে” [ বুখারী হাদিস/ ৫৫৯০]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ تَعَالَى حَرَّمَ الْخَمْرَ وَالْمَيْسِرَ والكُوْبَةَ.
অর্থ হচ্ছে: ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মদ, জুয়া ও সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন “ [বায়হাক্কি, হাদিস ছহিহ মিশকাত হা/৪৫০৩; বাংলা ৮ম খণ্ড হা/৪৩০৪]
গান বাজনার ক্ষতিকর দিক সমূহ
ইসলাম কোন জিনিসের মধ্যে ক্ষতিকারক কোন কিছু না থাকলে সেটিকে হারাম করে নি। গান-বাজনার মধ্যে ক্ষতির অনেক ধরনের জিনিস রয়েছে। যেগুলো হয়তো আমরা জানি না কিন্তু আল্লাহ তাআলা জানেন এজন্য তিনি আমাদের জন্য গান-বাজনা কে হারাম করে দিয়েছেন।
১। বাজনা হচ্ছে নফসের মদ স্বরুপ
মদ যেমন করে মানুষের ক্ষতি করে থাকে ঠিক তেমনি বাদ্যযন্ত্র ও মানুষের সেরকম ক্ষতি করে থাকে। যখন গান-বাজনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলে তখন তারা শিরকে পতিত হতে শুরু করে। এবং শিরকে পতিত হওয়ার পর তারা ফায়েসা কাজ ও জুলুম করতে উদ্যত হয়ে যায়। একে একে তারা শির্ক করতে থাকে এবং যাদের কতল করার নিষেধ তাদেরকে কেউ কত করতে থাকে ও জিনায় লিপ্ত হয়। যারা গান-বাজনা করে থাকে তাদের বেশিরভাগ এর মধ্যেই আমরা এই তিন ধরনের দোষ দেখে থাকি। তাদের বেশিরভাগই মুখ দিয়ে শিস দেয় ও হাততালি দেয়।
২। শিরকের নিদর্শন
এদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকই তাদের শায়খ (পীর) অথবা তাদের গায়কদের কে আল্লাহর মত ভালবাসে অথবা এর থেকেও অধিক।
৩। ফাহেশার মধ্যে
গান-বাজনা হচ্ছে জিনার রাস্তা স্বরূপ। এজন্যই বেশিরভাগ ফাহেশা কাজগুলো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে গানের মজলিসে। যেখানে পুরুষ, বালক, বালিকা ও মহিলা চরম স্বাধীন এবং লজ্জাহীন হয়ে ওঠে। এভাবে গান শ্রবণ করতে করতে নিজেদেরকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়। তখন তাদের মধ্যে ফাহেশা কাজ করা সহজ হয়ে দাঁড়ায় এবং যা মদ্যপানে সমতুল্য কিংবা এর থেকেও অনেক অধিক ও জঘন্যতম কাজ।
৪। কতল বা হত্যা
অনেক সময় গান শ্রবন করতে করতে উত্তেজিত হয়ে একে অপরকে পতন করে দেয়ার মত ঘটনা হয়ে থাকে। তখন বলে থাকে, তার মধ্যে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল যে জন্য হত্যা করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। ওই কাছ থেকে তার বিরত থাকার ক্ষমতা বা বাইরে আসার ক্ষমতা ছিল না। আসলে এই সময়গুলোতে মজলিসে শয়তান উপস্থিত হয়ে তাদেরকে আরো বেশি শক্তিশালী করে তোলে এবং অন্যদের কত করে ফেলে।
পরিশেষে
গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে ব্যাখ্যা হিসেবে অনেক ধরনের আয়াত ও হাদিস পাওয়া যায়। একটি প্রশ্নের মাধ্যমে সকল হাদিস এবং আয়াত তুলে ধরা সম্ভব নয়। এজন্য সংক্ষেপ আকারে আপনাদের জন্য গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে ব্যাখ্যা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আপনি লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন আল্লাহতালা গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন শরীফে কি বলেছেন এবং আল্লাহর রাসূল থেকে গান-বাজনা শোনার সম্পর্কে কি কি হাদিস পাওয়া যায় তার ছোট্ট এবং সংক্ষিপ্ত আর্টিকেল। আপনার বন্ধু বা প্রিয়জনকে এই হারাম কাজ এবং অপমানজনক জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচাতে এই পোস্টটি তাকে শেয়ার করতে পারেন এবং এমন গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট আরো পড়তে আমাদের সাইট ভিজিট করুন।